ডেস্ক নিউজ : বাংলা মাসের আজ পহেলা ফাল্গুন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ। বসন্ত ঋতু। আর তাই ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক, আজ বসন্ত। ফুল ফোটা নিয়ে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের শঙ্কা থাকলেও আজ ফুল ফুটেছে। কৃষ্ণচূড়ার ডালে লেগেছে আগুন, বাতাসে দুলছে ফাগুণ। গাছে গাছে মেলেছে শিমুল। শীতকে হার মানিয়ে দখিণা হাওয়ার গুঞ্জণও লেগেছে। বাতাসে ফুলের গন্ধ ভেসে এসে বলছে- বসন্ত এসেছে।
ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করতে মেতেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। বসন্তের প্রথম দিনে বাসন্তী রঙের শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে তরুণীরা মাথায় পরেছে ফুলের মুকুট। আর সেই সঙ্গে গোলাপ, গাঁদা, ডালিয়াসহ বাহারি নামের বর্ণালি ফুলে ক্যাম্পাসের গাছেও যেন বসন্ত জানান দিচ্ছে খুব ভালোভাবেই। শীতের রিক্ততা মুছে প্রাণের স্পন্দনে একটু একটু করে জেগে উঠেছে প্রকৃতি, ঠিক তেমনি করে বসন্তের ফুলে সেজে উঠেছে মতিহারের সবুজ চত্বর।
এদিকে বসন্তকে বরণ করে নিতে ফাগুনের প্রথম প্রহরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় বসন্তবরণ ও পিঠা উৎসবের। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস। এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রভাষ কুমার কর্মকার ও শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক হাসিবুল আলম প্রধান।
পরে চারুকলা অনুষদের আয়োজনে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। এছাড়া চারুকলার মুক্তমঞ্চে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। একপাশে পিঠার স্টলগুলো থরে থরে সাজানো। সেগুলোতে সাজানো রয়েছে ভিন্ন রঙ ও স্বাদের পিঠা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই দলবেঁধে তরুণ-তরুণীরা ভিড় করে সেখানে। অনেকে এসেছেন প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে। শুধুমাত্র ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরাই নয়। বাইরের তরুণ-তরুণীরাও ক্যাম্পাসের নানা অনুষ্ঠানে এসে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।
বসন্তবরণ করে নিতে ক্যাম্পাসে শোভাযাত্রা বের করে কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোট আয়োজন করে শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক আড্ডা, চড়–ইভাতি ও নবীনবরণ। নানা আয়োজনে বসন্তকে বরণ করে নিয়েছে সংগীত বিভাগ, ফোকলোর বিভাগ ও বাংলা বিভাগ। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে ‘দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, জীবন বদলে যাবে’ স্লোগাণে রাবি কোয়ান্টাম ম্যাথড দিনব্যাপী চিত্রকলা প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ক্যাম্পাসের প্রথম বসন্তবরণে তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে আলাদা প্রাণচাঞ্চল্য। পাঞ্জাবি-শাড়ি পরে বন্ধুরা মিলে পুরো ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হই-হুল্লোড় করে। প্রথম বর্ষের শাওন তাদেরই একজন। তিনি বলেন, গ্রামে কখনো বসন্ত বরণের এতো আয়োজন প্রত্যক্ষ করিনি। ক্যাম্পাসের নানা উৎসবে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। প্রাণভরে উপলব্ধি করছি আজকে ক্যাম্পাসের আনন্দ।
আবার বসন্ত আসলেও অনেকের মনেই বাজছে বিদায়ের সুর। কারণ পড়াশোনা শেষ করছেন তারা। ক্যাম্পাস জীবনে এটাই তাদের শেষ বসন্ত। তাই বন্ধুরা মিলে যতটুকু পারা যায় প্রাণ ভরে নিচ্ছেন বসন্তের আস্বাদ। কথা হয় এমনই একজন শিক্ষার্থী নাসরিন আকতার সঙ্গে। তিনি বলেন, মতিহারের সবুজ চত্বর এমনিতেই আমাদের কাছে উপভোগ্য। একই সঙ্গে বসন্ত বরণের প্রাণচাঞ্চল্য মুগ্ধ করছে। ক্যাম্পাসের শেষ বসন্তকে স্বরণীয় করে রাখতে বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলে রাখছি।